শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০২ পূর্বাহ্ন
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি, কালের খবর :
হাফিজা বেওয়া প্রায় ১৫ বছর আগেই হারিয়ে স্বামীকে। সম্পদ যা ছিল নদী নিয়েছে তা কেড়ে। বারবার নদী ভাঙন স্বামী হারা হাফিজাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। কয়েকবার নদী ভাঙনের পর সর্বশেষ কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের ২শ’ বিঘা চরের একটি স্থানে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানেও হানা দেয় নদী। কেড়ে নেয় বাড়িঘর, ভাসিয়ে নেয় সাজানো সংসার। সর্বস্বান্ত সর্বহারা বৃদ্ধা হাফিজার আশ্রয় হয় নবনির্মিত দক্ষিণ খাউরিয়া আশ্রয় প্রকল্প-২ এর ব্যারাকে। কিন্তু সেখানেও থাকা হলো না হাফিজার।
সেখানেও হানা দেয় ব্রহ্মপুত্র একে একে গিলে ফেলে ৪টি ব্যারাকের ২০টি ঘর। সেই সঙ্গে শেষ আশ্রয়স্থল হারিয়ে হাফিজা এখন অসহায়। নেই সহায় সম্বল কোথায় যাবে, থাকবে কোথায় তা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে হাফিজাকে। হাফিজা জানায়, অনেক আগেই স্বামী চলে গেছে পরপারে। নদী ভাঙনে স্বামীর শেষ সম্বল বাড়িভিটাসহ সব হারিয়ে মেয়েকে নিয়ে অতিকষ্টে দিনাপাত করছিলেন। অতিকষ্টে মেয়ের বিয়ে দিলেও তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন ২শ’ বিঘা চরে। কিন্তু গত বন্যা আর নদীর তীব্র ভাঙন ও স্রোতে ভাসিয়ে নেয় তার বাড়িঘর। ভেঙে যায় ভিটাটুকু। আশ্রয়হীন হাফিজা সরকারের দেয়া আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। কয়েকদিনের মধ্যে তার বরাদ্দকৃত ঘরটি বুঝে পাবেন সরকারি ভাবে। বেশ খুশি আর মনবল ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই খুশি আর মনবল নিমিষেই ভেঙে দেয় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন। এনে দেয় চোখের জল, কেড়ে নেয় মুখের হাসি। শুধু হাফিজা নয়, নবনির্মিত আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সোনাভান, আ. মান্নানসহ ১৫০ অসহায় পরিবার। কিন্তু সেই আশা পূরণ হলো না তাদের। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার আগেই ব্রহ্মপুত্রের থাবায় ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্যারাক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলা বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭/১৮ অর্থবছরে দক্ষিণ খাউরিয়া আশ্রয় প্রকল্প-২ এর মাটি ভরাটের জন্য ৫১৯ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। মাটির কাজ শেষ হলে সেখানে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ পরিবারের জন্য ৩০টা ব্যারাক তৈরি করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কিছুদিন আগে স্থানীয় প্রশাসনকে তা হস্তান্তর করা হয়। যদিও বেশকিছু আশ্রয়হীন পরিবার আশ্রয় নেয়া শুরু করছিল এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা বাছাইকৃত আশ্রয়হীন সুবিধাভোগীর মাঝে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল কিন্তু তার আগেই শুরু হয় নদী ভাঙন। আর সেই সঙ্গে ইতিমধ্যে ৪টি ব্যারাক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বিলীনের পথে। ইউপি চেয়ারম্যান আবু হানিফা ভাঙনের কথা স্বীকার করে বলেন, কয়েকটি অসহায় ও আশ্রয়হীন পরিবারকে সবেমাত্র আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় দেয়া হয় এবং বাকি পরিবারের জন্য তালিকা করে তাদের বরাদ্দকৃত ঘরগুলো বুঝে দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল। কিন্তু তার আগেই নদী ভাঙন সব শেষ করে দিল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্ বলেন ভাঙনের বিষয়টা শুনেছি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মতামত দিন